Good Property 0 Comments 100 Views
এখন, আমরা একটা ৫০ লাখ টাকার লোন নিয়ে নিবো। টাকা যেহেতু অনেক বেশি, লোনটা দীর্ঘ সময়ের জন্য নিয়ে নিই, কী বলেন? লোন নিবো ২০ বছরের জন্য। ইন্টারেস্ট রেইট ইদানীং অনেক বেশি, আমরা ১২% রেটে ই নিচ্ছি। হিসাবকিতাব মুখে মুখে করে ফেলা যাবে! ৫০ লাখ টাকা ২০ বছরের জন্য ১২% রেটে লোন নিলে আমাদেরকে মোট কিস্তি দিতে হবে ২৪০ টা (১২*২০)। একেকটা কিস্তি হবে ৫৫,০৫৪.৩১ টাকা। আবারও সহজ হিসাবের স্বার্থে আমরা ধরে নিচ্ছি ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের পয়লা দিনে আমরা টাকাটা পাবো। ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তি জমা দেবো।
কিস্তি দিয়েই যাই, হোম লোনের ব্যালান্স কমে না! কাহিনী কী, ভাই? (পর্ব-২)
এই সিরিজ লেখা শুরু করেছি, এখন সিরিজের নাম আমার নিজেরই পছন্দ হচ্ছে না!
নামটা এরকম হলে ভালো হতো- কিস্তি দিয়েই যাই, দিয়েই যাই, ব্যাংকের পাওনা কমে না! ক্যাম্নে কী, ভাই?
এখন, সিরিজটা ম্যালা লোকে লাইক করেছেন, শেয়ার করেছেন, ম্যালা লোকের কাছে পৌঁছেছে (প্রায় ২ লাখ)। নাম বদল করে সেইসব মানুষের আগ্রহের অনাদর করা ঠিক হবে না বলে মনে হচ্ছে।
আমরা কিস্তি কীভাবে নির্ধারিত হয়, কিস্তির টাকা কীভাবে লোন শোধ করে- এটার প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি প্রথম পর্বে। ১ বছরের জন্য ১২% সুদে ১ লাখ টাকার একটা লোন নিয়ে সেটা শোধও করে ফেলেছি।
প্রথম পর্বে আমি মূলত যেটা বলতে চেয়েছি, সেটা হলো- ব্যাংকে গ্রাহক যে কিস্তি জমা দেন, সেটার একটা অংশ ব্যয় হয় সুদ পরিশোধে, বাকি টাকা দিয়ে মূল লোন পরিশোধ হয়।
.
.
.
এখন, আমরা একটা ৫০ লাখ টাকার লোন নিয়ে নিবো। টাকা যেহেতু অনেক বেশি, লোনটা দীর্ঘ সময়ের জন্য নিয়ে নিই, কী বলেন? লোন নিবো ২০ বছরের জন্য। ইন্টারেস্ট রেইট ইদানীং অনেক বেশি, আমরা ১২% রেটে ই নিচ্ছি। হিসাবকিতাব মুখে মুখে করে ফেলা যাবে!
৫০ লাখ টাকা ২০ বছরের জন্য ১২% রেটে লোন নিলে আমাদেরকে মোট কিস্তি দিতে হবে ২৪০ টা (১২*২০)। একেকটা কিস্তি হবে ৫৫,০৫৪.৩১ টাকা।
আবারও সহজ হিসাবের স্বার্থে আমরা ধরে নিচ্ছি ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের পয়লা দিনে আমরা টাকাটা পাবো। ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তি জমা দেবো।
.
.
.
ফেব্রুয়ারিতে যে ৫৫,০৫৪.৩১ টাকা আমরা জমা দেবো, তার মধ্যে ৫০,০০০ টাকাই যাবে সুদ পরিশোধে! ৫০ লাখ টাকার ১% তো ৫০,০০০ টাকাই হয়, তাই না?
প্রথম কিস্তির ৫৫,০৫৪.৩১ টাকা জমা দেবার পর ব্যাংকের পাওনা কমবে মাত্র ৫,০৫৪.৩১ টাকা।
এভাবে এক বছর কিস্তির টাকা জমা দেবার পরে, ব্যাংকের পাওনা দাঁড়াবে ৪,৯৩৫,৮৯৮.৭৪ টাকা!
এক বছরে (৫৫,০৩৪.৩১*১২) অর্থাৎ ৬৬০,৬৫১.৭২ টাকা জমা দেওয়ার পর ব্যাংকের পাওনা শোধ হবে মাত্র ৬৪,১০১.২৬ টাকা। সুদ ব্যয় ৫৯৬,৫৫০.৪২ টাকা।
(ছবি-১)
বলেন, ব্যাংক ডাকাইত না? মানুষের সব টাকা নিয়ে মানুষকে নি:স্ব করে দেয় না?
.
.
.
দুই বছর ঠিকঠাক কিস্তি জমা দেবার পর ব্যাংকের পাওনা দাঁড়াবে ৪৮৬৩,৬৬৭.৮৪ টাকা।
২৪ কিস্তিতে ১,৩২১,৩০৩.৪৪ টাকা জমা দেবার পর ব্যাংকের পাওনা শোধ হবে মাত্র ১৩৬,৩৩২.১৬ টাকা। সুদ ব্যয় ১,১৮৪,৯৭১.২০ টাকা!
(ছবি-২)
ব্যাংকের লোকজন মানুষ না ভাই, পিশাচ! এরা মানুষের রক্ত চুষে খায়!
.
.
.
দশ বছর ঠিকঠাক কিস্তি জমা দেবার পর ব্যাংকের পাওনা দাঁড়াবে ৩,৮৩৭,৩১৩.৯২ টাকা।
১২০ কিস্তিতে ৬,৬০৬,৫১৭.২০ টাকা জমা দেবার পর ব্যাংকের পাওনা শোধ হবে মাত্র ১,১৬২,৬৮৬.০৮ টাকা। সুদ ব্যয় ৫,৪৪৩,৮৩০.৭২ টাকা!!
৫০ লাখ টাকা লোন নিয়া দশ বছরে ৬৬ লাখ টাকা শোধ করার পরেও ব্যাংক ৩৯ লাখ পাবে!!
(ছবি-৩)
ব্যাংক মানুষকে মেরে ফেলে রে ভাই!
.
.
.
২০ বছরে গ্রাহক ব্যাংকে মোট জমা দেবেন ২৪০ কিস্তি। মানে মোট ১৩,৩১৩,০৩৩,৬০ টাকা। এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা!
ব্যাংক শুধু সুদই নেবে ৮,২১৩,০৩৩.৬০ টাকা!
সুদের পাল্লায় পড়লে মানুষের জীবন ধ্বংস!
.
.
.
দাঁড়ান, ভাই। এই হিসেবটা সরলরৈখিক। বাস্তব এতোটা সরলরৈখিক নয়।
এখানে প্রথম যেই ব্যাপারটা এসাম্পশান করা হয়েছে, সেটা হলো- গ্রাহক প্রতিটি কিস্তি সঠিক সময়ে জমা দেবেন।
বাস্তবে তা হয়না।
গ্রাহক যদি একটা কিস্তিও একদিন পরে জমা দেন, গ্রাহকের পরিশোধিতব্য সুদের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
এর বাইরে, এই কুড়ি বছরে ব্যাংকের বিভিন্ন চার্জ, সরকারের চার্জ এগুলোও গ্রাহককে দিতে হবে।
আরেকটা কথা, সুদের হার বেশিরভাগ সময় পরিবর্তনশীল হয়। ব্যাংকের অপশন থাকে, তারা ইচ্ছে করলে সুদের হার বাড়াতে পারবে।
.
.
.
বিপদের উপর বিপদ!
তাহলে কি ব্যাংক থেকে লোনই নেবেন না?
ব্যাংক থেকে লোন নেয়া কি শুধুই লস?
এগুলো নিয়ে আলোচনা পরের পর্বে।
লেখা- চন্দন আজিজ
0 Comments
Submit a Comment